admin
- ৩০ জানুয়ারী, ২০২৩ / ১৩১ Time View
Reading Time: 2 minutes
মোঃ জয় সরকার, গাজীপুর :
গাজীপুরে বাবার কিনে দেওয়া কেক খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে আরেক শিশু। দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে রেখেছে পুলিশ। গতকাল রোববার সকালে মহানগরীর সদর থানাধীন সালনার ইপসা গেটে এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সকাল ১০টার দিকে তারা কেক খায়। এরপর হাসপাতালে নেওয়ার পর ১১টার দিকে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ওই দুই শিশু হলো আশামণি (৫) এবং দেড় বছর বয়সী আলিফা। তারা গাজীপুর মহানগরীর সালনা ইপসা গেট এলাকায় মোল্লাপাড়ায় মা ও নানির সঙ্গে একটি টিনশেড ভাড়াবাসায় থাকত। তাদের মা ছহুরা স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাদের বাবা আশরাফ আলী প্রায় এক বছর অন্যত্র থেকে এক সপ্তাহ আগে এসে তাদের সঙ্গে আছেন। আশরাফ আলীর গ্রামের বাড়ি শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানার শুকান্দা গ্রামে। এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে সিয়াম (ছয় মাস) নামে আরেক শিশু। সিয়াম ছহুরার ভাই হিরা মিয়ার ছেলে। স্থানীয়রা জানান, আজ সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় একটি দোকান থেকে একসঙ্গে ১২টি কেকের একটি প্যাকেট কিনে দেন মৃত দুই শিশুর বাবা আশরাফ আলী। ওই কেক তিন শিশু খাওয়ার পর বমি শুরু করে। সেই বমি খেয়ে বাড়ির কয়েকটি মুরগির বাচ্চা মারা যায়। পরে পরিবারের লোকজন দ্রুত শিশুদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক আশামণি ও আরিফাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই সময় আলিফাও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকেও হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক আলিফাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত শিশুদের বাবা আশরাফ আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সকালে স্থানীয় দোকান থেকে কেক কিনে দিয়েছিলাম। শিশুদের কেক খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বড় মেয়ে আশামণি বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে দ্রুত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই সময় আলিফা এবং সিয়ামও অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক আলিফাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ শিশুদের নানি বলেন, ‘সকালে কেক আনার পর আমি তাদের কেক খাওয়াই। কেক খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পর আমার নাতনিরা বমি করে। আমি মনে করেছি, তাদের বাতাস লেগেছে। পরে ঘরের মেঝেতে থাকা বমি খেয়ে বাড়ির মুরগির বাচ্চা মরে গেলে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।’
দুই শিশুর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বড় বেটির (মেয়ে) একটু ঠান্ডা লেগেছিল। সকালে আমি তাকে ওষুধ খাইয়ে কারখানায় কাজে চলে আসি। পরে শুনতে পাই তারা সবাই অসুস্থ। হাসপাতালে নেওয়ার সেখানে আমার দুই সন্তান মারা যায়।’
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুই শিশুকে হাসপাতালে আনা হলে বেলা ১১টার দিকে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়। শিশু দুটিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মরদেহ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা হচ্ছে, খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে শিশু দুটির মৃত্যু হয়েছে। সিয়াম নামে ছয় মাস বয়সী এক শিশু চিকিৎসাধীন। তার অবস্থাও গুরুতর। মারা যাওয়া শিশুদের লাশ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।’
জিএমপি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খাদ্যে বিষক্রিয়া শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। খাদ্যে কীভাবে বিষ এল—সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।’